দুই মাস আগে কইলো দুবাই আছি, এখন শুনি ফয়সাল পাকিস্তানে নিহত’
দুই মাস আগে কইলো দুবাই আছি, এখন শুনি ফয়সাল পাকিস্তানে নিহত’
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভিযানে ফয়সালের মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। ফয়সালের মা ও স্বজনদের আহাজারি
পাকিস্তানে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবানে (টিটিপি) যোগ দিয়ে সেনা অভিযানে নিহত বাংলাদেশি তরুণ ফয়সাল হোসেনের (২২) পরিবার জানত তিনি দুবাইপ্রবাসী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভিযানে তার মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। ফয়সালের মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম।
ফয়সাল মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নে ছোট দুধখালী গ্রামের আব্দুল আউয়াল মোড়লের ছেলে। ফয়সালের পরিবার রাজধানী ঢাকার জগন্নাথপুর এলাকার আজিজ সড়কে বসবাস করেন। তার বাবা আব্দুল আউয়াল পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান ও বড় ভাই আরামান মোড়ল একটি এনজিওতে চাকরি করেন। কার কথায় বা কীভাবে ফয়সাল দেশ ছাড়ে কেউ জানতো না।
স্থানীয়রা জানায়, গত শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার কারাক জেলায় পাকিস্তানী নিরাপত্তা বাহিনীর এক অভিযানে ১৭ টিটিপি সদস্য নিহত হয়। এ সময় বাংলাদেশি তরুণ ফয়সাল হোসেন নিহত হয়। শনিবার দুপুরে ফয়সালের মৃত্যুর খবর পায় পরিবার। তবে ফয়সালের মা চায়না বেগমের কাছে তার ছেলের মৃত্যুর খবর গোপন রাখা হয়। তাকে জানানো হয় ফয়সাল দুবাইতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছে। রোববার দুপুরে গ্রামের বাড়িতে এসে প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে আহাজারি করেন তিনি।
ফয়সালের মা চায়না বেগম বলেন, ‘ফয়সাল সবসময় কইতো দেশে কাম নাই বিদেশ যামু। পরে কিভাবে যে নিজের মতো কইরা চইলা গেলো বুঝলামই না। কয়েকমাস কোন খবর পাই নাই। পরে ফোন করে কইলো মা আমি দুবাই আছি। মাসে একবার-দুই বার কল করতো। বেশি সময় কথা কইত না।’
আহাজারি করে তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে কইলো দুবাই আছি, এখন শুনি ফয়সাল পাকিস্তানে নিহত। তখন পোলায় আমারে কইল- মা টাকা পয়সা তো তেমন পাঠাতে পারতাছি না, তুমি কেমন আছো, আমি এখানে খুব ভালো আছি। আমি কইলাম, বাবারে তুমি আইসা পড়ো। দেশেই কাম করো।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে চায়না বেগম বলেন, ‘বাবায় কইলো, মা আমি চইলা আসবো। আর তো ফিরা আইলো না আমার বাবার।’
আরও পড়ুনঃ আমির হামজার ব্যাপারে যে ব্যবস্থা নিলো জামায়াত
ফয়সালের চাচা হালিম মোড়ল জানান, তার ভাতিজার বিষয়ে জানতে পারেন গত ঈদুল আযহার সময়। তখন পুলিশ জানায় সে আফগানিস্তান আছে। ২০২৪ এর মার্চে দেশ ছেড়ে প্রায় ৬ মাস পরে তার বড় ভাই আরমান মোড়লের কাছে মুঠোফোনে কল করে জানায় সে দুবাই আছে এবং ভাল আছে। তবে বিস্তারিত জানার জন্য বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তার সঠিক জবাব দিত না সে। মাদারীপুরের জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা খোজ খবর নিতে তাদের বাড়িতে গেলে তারা জানতে পারে ফয়সাল আফগানিস্তান বা দুবাই নয়, পাকিস্তান গেছে। তখন তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তা আর হলো না।
নিহতের দাদা শুক্কুর মোড়ল বলেন, তার নাতি ফয়সাল সব নাতিপুতির মধ্যে সেরা ছিল। এক ওয়াক্ত নামাজও বাদ দিত না। নাতিটা খুব ভালো ছিল। এ পথে গিয়ে মারা গেছে সেটা কল্পনাও করতে পারতাছি না। কারা আমার নাতিরে পাকিস্তান নিয়ে খারাপ পথে নিলো, তাদের যেন বিচার হয়।
আরও পড়ুনঃ কাশিমপুরে পোশাক কারখানায় আগুন
ফয়সালের নানা জয়নাল বেপারী বলেন, কোন ভাবেই নাতির মৃত্যুর কথা মানতে পারছেন না। ফয়সাল পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। মসজিদে সামনে টুপি আতর বেঁচতো। ধর্মীয় লাইনে ছিল। কীভাবে কি হয়ে গেলো, হায় আল্লাহ্ আর কারো যেন এমন দশা না হয়।
সরকারের কাছে তিনি দাবি করেন, লাশটা যেন শেষ বারের মত দেখতে পারেন তারা। এছাড়া যারা ফয়সালকে এই পথে নিছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচার দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অনুসন্ধান) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে জঙ্গি হামলায় মাদারীপুরের এক তরুণ মারা গেছে বলে জানা গেছে। নিহতের পরিবার যদি পুলিশের কাছে আইনগত সহায়তা চায়, তাহলে পুলিশের পক্ষ থেকে সেটা অবশ্যই করা হবে। পাকিস্তান থেকে নিহতের লাশ ফেরত আনার যদি কোন ব্যবস্থা থাকে সেটাও করা হবে।
আপনার মতামত লিখুনঃ

Comments
Post a Comment