হলগুলোতে ‘দেদারসে’ রাজনীতি করছে ছাত্রশিবির

 হলগুলোতে ‘দেদারসে’ রাজনীতি করছে ছাত্রশিবির




অন্যদের বাধা দিলেও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ‘দেদারসে’ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আব্দুল কাদের।


শনিবার এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, শৃঙ্খলা কমিটি কিংবা ব্যাচ প্রতিনিধির নামে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা হলগুলোতে ছায়া প্রশাসন জারি রেখেছেন।


কাদেরের অভিযোগ, হলের শৃঙ্খলা কমিটির অধিকাংশই ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত। তারা অনলাইন ভোটাভুটিতে কারচুপি করে এসব প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন।





এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলছেন, এগুলো তাদের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার একটা রাজনীতি।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, সেই বিতর্ক নতুন করে সামনে আসে শুক্রবার।


সেদিন ঢাবির ১৮টি হলে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপরই ওই কমিটি নিয়ে শুরু হয় নানা সমালোচনা।


এছাড়া হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন একদল শিক্ষার্থী।


তাদের আন্দোলনের মুখে শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান।


তবে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের মনে করেন, আবাসিক হলগুলোয় গুপ্ত ও প্রকাশ্য রাজনীতি বন্ধের যে ঘোষণা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিয়েছে, তা খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না।


ফেইসবুকে তিনি লিখেছেন, “এমন ঘোষণায় কেবল প্রকাশ্য রাজনীতিটা বাধাগ্রস্ত হবে, গুপ্তদের আটকাতে পারবে না। দুদিন পর আবারও পরিস্থিতি বেগতিক হবে। তাছাড়া এর আগেও এমন ঘোষণা বহুবার হয়েছে; সমাধান হয়নি।


“দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন শিক্ষার্থী, ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একত্রে বসে আলাপ-আলোচনা করে একটা সমন্বিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির সুস্পষ্ট রূপরেখা হাজির করা। সব পক্ষ একটা চুক্তিতে আসা ব্যতিত এ অবস্থার কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নাই।”


ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি জুলাই আন্দোলনের সময়কার নয় দফার মধ্যে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ঢুকাতে চেয়েছিলেন বলেও মন্তব্য করেন আব্দুল কাদের।


আরও পড়ুনঃ কলকাতায় ‘পার্টি অফিস’ খুলেছে আওয়ামী লীগ, কিভাবে চলছে কার্যক্রম?

তিনি বলছেন, “ফরহাদ সাহেব সপ্তম দফায় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি ঢুকাতে চেয়েছিলেন। এটা নিয়ে তার সঙ্গে আধা ঘণ্টার বেশি সময় তর্ক-বিতর্ক হয়।


“আমি তখনও তাকে স্পষ্ট করে বলেছি, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা আসল সমাধান না। আর রাজনীতি বন্ধ করলে কার লাভ, সেটাও তাকে ধরিয়ে দিয়েছি।”


তিনি বলছেন, “লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি কিংবা রাজনীতি বন্ধ করাও যেহেতু ফিজিবল না, সেজন্য ৫ অগাস্টের পরে ভিন্ন কাঠামো ভাবার প্রয়োজন অনুভূত হয়েছে। যদিও ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা গোষ্ঠী তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, মব ক্রিয়েট করেছেন, কিন্ত শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেন নাই। তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও এই মবের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। যদি উদাহরণ দিতে বলেন, তাহলে বলি- ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে সম্মুখ সারিতে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।


“তিনি পরবর্তী সময়ে শিবিরের ঢাবি শাখার প্রকাশিত কমিটির ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন! ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের আহ্বান জানানো, আন্দোলন করা মুনতাসীর পরবর্তী সময়ে তিতুমীর কলেজ শাখা শিবিরের সেক্রেটারি হিসেবে আবির্ভূত হলেন! শিবিরের প্রতিটা ইউনিট— ক্যাম্পাস ও হল কমিটি প্রকাশ করলে এমন অসংখ্য চমক হয়ত আমরা দেখতে পেতাম।”


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে শুক্রবার মধ্য রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে শুক্রবার মধ্য রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী।


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ছাত্র সংগঠনটির নেতা কাদের বলছেন, “ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের এজেন্ডা ব্যর্থ হওয়ার পরবর্তী পর্যায়ে একপ্রকার ঠিক হলো, শিক্ষার্থীদের দারি-দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে হল ও একাডেমিক এরিয়ায় রাজনৈতিক কাঠামো ফাংশন করবে না।


“আমি মনে করি, হল ও একাডেমিক এরিয়ায় রাজনীতি না চাওয়ার বিষয়টা একচুয়াল সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই দাবি, শিবিরের সাধারণ শিক্ষার্থীদের না। এমন দাবির পেছনের কারণ হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের বিগত দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা।”


আরও পড়ুনঃ আমি শিক্ষার্থী হলে এনসিপিতে যোগ দিতাম না

হল ও ‘একাডেমিক এরিয়ায় রাজনীতি ফাংশন’ না করার ব্যাপারে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে একটা অলিখিত সমঝোতা ছিল বলেও মন্তব্য করেন কাদের।


তিনি বলেন, “এই দাব উত্থাপিত হওয়ার সময় শিবিরের ঢাবি নেতৃত্বের সঙ্গেও আমাদের আলাপ হয়েছে। মাঠে যখন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জোরালো আন্দোলন হয়, তখন আমাদের পক্ষ থেকে এই ফরমেট প্রস্তাবিত হয় এবং ফরহাদ হোসাইনের সঙ্গে আলোচনা করে এই দাবিটা স্পষ্ট করা হয়।


“এ দাবি শিবিরও মেনে নিয়েছে, আমরাও সংগঠনের আত্মপ্রকাশের দিন শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অঙ্গীকার করেছি। অন্যান্য ছাত্রসংগঠনও নিরব সম্মতি দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে সরাসরি যান নাই।”


কিন্তু ছাত্রশিবির তারপরেও কমিটি দিয়ে দেদারসে রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ তোলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের এ নেতা।


তিনি বলেন, “পরবর্তী সময়ে আমাদের সাংগঠনিক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও আমরা আর হল কমিটি দেই নাই, শিক্ষার্থীদের স্বার্থের জায়গাটা প্রাধান্য দিয়েছি। অন্যান্য ছাত্রসংগঠনও হলে ওইভাবে কমিটি ফাংশন করেন নাই। কিন্ত শিবির শিক্ষার্থীদের প্রতি দেওয়া কমিটমেন্ট ব্রেক করেছেন।


“তাদের আগের কমিটি বহাল রেখেছেন এবং দেদারসে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। হলে হলে শৃঙ্খলা কমিটি, ব্যাচ প্রতিনিধির নামে হলগুলোতে ছায়া প্রশাসন হিসেবে কাজ করেছেন। হলের শৃঙ্খলা কমিটির অধিকাংশই শিবিরের, অনলাইন ভোটাভুটির মাধ্যমে তারা ইঞ্জিনিয়ারিং করে সেই প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন।”


শিবিরের বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন, “নিজেরা হলে নবোদ্যমে সাংগঠনিক কাজ করে গেছেন, অন্যকেউ করতে গেলে কিংবা হলে উঠতে গেলে মব ক্রিয়েট করেছেন। যার ফলে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে, হওয়াটাই স্বাভাবিক।


“ঢাবি শিবিরের সভাপতি যখন ছোট ছোট টিম দিয়ে হল পরিচালনা করবেন; আর অন্যদেরকে বাধা দেবেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই অন্যরা ক্ষুব্ধ হবেন। তারাও হলগুলোতে নিজেদের সাংগঠনিক কাঠামো ফাংশন করার ব্যাপারে উদগ্রীব হবেন।”


আরও পড়ুনঃ বাউফলে চাঁদাবাজির অভিযোগে নেতার ছেলে গ্রেপ্তার

একদল শিক্ষার্থীর দাবির মুখে শুক্রবার আবাসিক হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান।

একদল শিক্ষার্থীর দাবির মুখে শুক্রবার আবাসিক হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান।


তিনি অভিযোগ করেছেন, “হলে হলে রাজনীতি বন্ধের ব্যাপারে অন্যান্য ছাত্রসংগঠন যখন নীরব সমঝোতায় এলেন, তখন শিবির নিজেদের হল কমিটি বহাল রেখে এবং সেটাকে ফাংশন করে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকেও হলে হলে রাজনৈতিক কাঠামো দেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন।


“শিবিরের ঢাবি নেতৃত্বের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ হলেও তারা নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেছেন। হল কমিটি ফাংশন না করলে তাদের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়বে বলে তারা জানিয়েছেন। তাছাড়া তাদের এই হল কমিটি নাকি রাজনৈতিক কমিটি না, সেই বিষয়ে তারা স্ট্যান্ড নিলেন। যা-ই হোক, শিবির নিজেদের হল কমিটি ফাংশনাল রেখে, অন্যদের পথকে সুগম করেছেন, এটাই প্রকৃত সত্য বিষয়।”


কাদেরের এসব অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রশিবির নেতা এস এম ফরহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বলছেন, “আন্দোলনের সময়ে হলের যেসব শিক্ষার্থী দুঃসাহসী ভূমিকা রেখে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে হল ও ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছিল, সেসব শিক্ষার্থীর তো লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হত। ছাত্রলীগ যদি ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার সুযোগ পায়, তাহলে এসব শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও ক্যারিয়ার হুমকিতে পড়তে পারে।


“এ বিষয়টি মাথায় রেখে নয় দফায় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি যুক্ত করা হয়েছিল, যেহেতু তখনো আন্দোলনে এক দফায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।”


তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটনের আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদেরকে নিরাপদ রাখতে এই দফার সংযুক্তি অত্যন্ত যৌক্তিক ছিল। বর্তমানে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটনের মাধ্যমে সেই সংকট সমাধান হয়েছে; একই সঙ্গে ছাত্র রাজনীতির পুরো সিস্টেমে প্যারাডাইম শিফটিংয়ের সুযোগও তৈরি হয়েছে।”


আপনার মতামত লিখুনঃ

Countdown Timer
00:01

Comments

Popular posts from this blog

বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে যাওয়ার পথে হঠাৎ অসুস্থ বর, হাসপাতালে মৃত্যু

সন্তানের সামনেই মাকে গণধর্ষণ আর্মি অফিসারদের! বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

কোন ভি’টামিনের অভাবে অতিরিক্ত ঘাম ঝরে, জেনে নিন!