রক্তে সিসার মাত্রা বেড়ে গেলে কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে
রক্তে সিসার মাত্রা বেড়ে গেলে কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে
রাজধানীর শিশুদের শরীরে সিসার উপস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআরবি একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ২-৪ বছর বয়সী ৫০০ শিশুর মধ্যে ৯৮ শতাংশের রক্তেই সিসার বিপজ্জনক মাত্রার উপস্থিতি আছে। আবার ইউনিসেফের তথ্যও বলছে, সারা বিশ্বে সিসা দূষণে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ—প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশুর রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রক্তে সিসা থাকলে কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে? আর করণীয়ই-বা কী?
রক্তে অতিমাত্রায় সিসার কারণ
সিসানির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠান যেমন লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি উৎপাদন ও রিসাইক্লিং কারখানা, সিসা গলানোর কেন্দ্র দূষণের মূল উৎস। এ ছাড়া বাড়ির ভেতরে ধূমপান, ধূলিকণা, সিসাযুক্ত প্রসাধনী ও রান্নার পাত্র থেকেও শিশুদের শরীরে সিসা ঢুকছে। আরও আছে সিসাযুক্ত বিভিন্ন রং, যা ঘরের বিভিন্ন অংশ রং করতে, শিশুদের খেলনায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া সিসার পানির পাইপ থেকেও পানির মাধ্যমে শরীরের মধ্যে প্রবেশ করতে
রক্তে সিসার মাত্রা বেড়ে গেলে কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে
ডা. ফারাহ দোলাবিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ০১
ফলো করুন
দেশের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশুর রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া গেছে
দেশের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশুর রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া গেছেছবি: পেক্সেলস
রাজধানীর শিশুদের শরীরে সিসার উপস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআরবি একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ২-৪ বছর বয়সী ৫০০ শিশুর মধ্যে ৯৮ শতাংশের রক্তেই সিসার বিপজ্জনক মাত্রার উপস্থিতি আছে। আবার ইউনিসেফের তথ্যও বলছে, সারা বিশ্বে সিসা দূষণে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ—প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশুর রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রক্তে সিসা থাকলে কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে? আর করণীয়ই-বা কী?
রক্তে অতিমাত্রায় সিসার কারণ
সিসানির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠান যেমন লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি উৎপাদন ও রিসাইক্লিং কারখানা, সিসা গলানোর কেন্দ্র দূষণের মূল উৎস। এ ছাড়া বাড়ির ভেতরে ধূমপান, ধূলিকণা, সিসাযুক্ত প্রসাধনী ও রান্নার পাত্র থেকেও শিশুদের শরীরে সিসা ঢুকছে। আরও আছে সিসাযুক্ত বিভিন্ন রং, যা ঘরের বিভিন্ন অংশ রং করতে, শিশুদের খেলনায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া সিসার পানির পাইপ থেকেও পানির মাধ্যমে শরীরের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে।
লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি উৎপাদন ও রিসাইক্লিং কারখানা সিসা দূষণের অন্যতম মূল উৎস
লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি উৎপাদন ও রিসাইক্লিং কারখানা সিসা দূষণের অন্যতম মূল উৎসছবি: ইউনিসেফ
রক্তে সিসা থাকলে কী হতে পারে
শরীরে খুব অল্প মাত্রায় সিসার উপস্থিতিও দীর্ঘ মেয়াদে অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারে, বিশেষত শিশু এবং অন্তসত্ত্বা নারীদের। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিশুদের মস্তিষ্কের ওপর এর স্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব। উচ্চমাত্রায় সিসার উপস্থিতি কিডনিতেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অতি উচ্চমাত্রায় সিসা শিশুর খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এমনকি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা নারী অতিরিক্ত সিসার প্রভাবে জন্ম দিতে পারে অপরিণত ও কম ওজনের সন্তান। কারও কারও ক্ষেত্রে গর্ভপাত বা মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা যায়। কখনো কখনো মৃত সন্তান প্রসব হতে পারে উঁচু মাত্রায় সিসার প্রভাবে।
কীভাবে প্রকাশ পায়
অনেক ক্ষেত্রেই সিসার বিষক্রিয়া প্রথম দিকে ততটা বোঝা যায় না। ধীরে ধীরে শিশুদের মধ্যে প্রভাবগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। যেমন—
শিশুর বিলম্বিত বিকাশ
শিখন অক্ষমতা বা লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি
বিরক্তিভাব
আচরণগত সমস্যা
অতিচঞ্চলতা, অমনোযোগিতা
ক্ষুধামান্দ্য
ওজন হ্রাস
দুর্বলতা
কাজে ধীরগতি
পেটে ব্যথা
বমিভাব বা বমি হওয়া
রক্তশূন্যতা
কোষ্ঠকাঠিন্য
খিঁচুনি
খাদ্যদ্রব্য নয়, এমন জিনিস খাওয়ার প্রতি আসক্তি
বড়রা ভুগতে পারেন উচ্চরক্তচাপ, মাথাব্যথা, অমনোযোগিতা, মাংস কিংবা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা,
লা
বিনোদন
চাকরি
জীবনযাপন
Eng
By using this site, you agree to our Privacy Policy.
OK
ছবি
ভিডিও
ছবি
সুস্থতা
রক্তে সিসার মাত্রা বেড়ে গেলে কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে
ডা. ফারাহ দোলাবিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ০১
ফলো করুন
দেশের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশুর রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া গেছে
দেশের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশুর রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া গেছেছবি: পেক্সেলস
রাজধানীর শিশুদের শরীরে সিসার উপস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআরবি একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ২-৪ বছর বয়সী ৫০০ শিশুর মধ্যে ৯৮ শতাংশের রক্তেই সিসার বিপজ্জনক মাত্রার উপস্থিতি আছে। আবার ইউনিসেফের তথ্যও বলছে, সারা বিশ্বে সিসা দূষণে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ—প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশুর রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রক্তে সিসা থাকলে কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে? আর করণীয়ই-বা কী?
রক্তে অতিমাত্রায় সিসার কারণ
সিসানির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠান যেমন লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি উৎপাদন ও রিসাইক্লিং কারখানা, সিসা গলানোর কেন্দ্র দূষণের মূল উৎস। এ ছাড়া বাড়ির ভেতরে ধূমপান, ধূলিকণা, সিসাযুক্ত প্রসাধনী ও রান্নার পাত্র থেকেও শিশুদের শরীরে সিসা ঢুকছে। আরও আছে সিসাযুক্ত বিভিন্ন রং, যা ঘরের বিভিন্ন অংশ রং করতে, শিশুদের খেলনায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া সিসার পানির পাইপ থেকেও পানির মাধ্যমে শরীরের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে।
লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি উৎপাদন ও রিসাইক্লিং কারখানা সিসা দূষণের অন্যতম মূল উৎস
লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি উৎপাদন ও রিসাইক্লিং কারখানা সিসা দূষণের অন্যতম মূল উৎসছবি: ইউনিসেফ
রক্তে সিসা থাকলে কী হতে পারে
শরীরে খুব অল্প মাত্রায় সিসার উপস্থিতিও দীর্ঘ মেয়াদে অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারে, বিশেষত শিশু এবং অন্তসত্ত্বা নারীদের। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিশুদের মস্তিষ্কের ওপর এর স্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব। উচ্চমাত্রায় সিসার উপস্থিতি কিডনিতেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অতি উচ্চমাত্রায় সিসা শিশুর খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এমনকি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা নারী অতিরিক্ত সিসার প্রভাবে জন্ম দিতে পারে অপরিণত ও কম ওজনের সন্তান। কারও কারও ক্ষেত্রে গর্ভপাত বা মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা যায়। কখনো কখনো মৃত সন্তান প্রসব হতে পারে উঁচু মাত্রায় সিসার প্রভাবে।
কীভাবে প্রকাশ পায়
অনেক ক্ষেত্রেই সিসার বিষক্রিয়া প্রথম দিকে ততটা বোঝা যায় না। ধীরে ধীরে শিশুদের মধ্যে প্রভাবগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। যেমন—
শিশুর বিলম্বিত বিকাশ
শিখন অক্ষমতা বা লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি
বিরক্তিভাব
আচরণগত সমস্যা
অতিচঞ্চলতা, অমনোযোগিতা
ক্ষুধামান্দ্য
ওজন হ্রাস
দুর্বলতা
কাজে ধীরগতি
পেটে ব্যথা
বমিভাব বা বমি হওয়া
রক্তশূন্যতা
কোষ্ঠকাঠিন্য
খিঁচুনি
খাদ্যদ্রব্য নয়, এমন জিনিস খাওয়ার প্রতি আসক্তি
বড়রা ভুগতে পারেন উচ্চরক্তচাপ, মাথাব্যথা, অমনোযোগিতা, মাংস কিংবা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, পেটে ব্যথা, এমনকি বন্ধ্যত্বের মতো সমস্যায়।
করণীয়
শ্বাসের সঙ্গে, খাবারের মাধ্যমে, দূষিত মাটি বা ধূলিকণা দিয়ে এবং এমনকি গর্ভাবস্থায় মায়ের প্লাসেন্টা থেকেও সন্তানের শরীরে সিসা প্রবেশ করে। সিসা থেকে বাঁচতে হলে এর মূল উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে সবার আগে।
সিসার বিষক্রিয়া থেকে শিশুকে বাঁচাতে সবার আগে শিশুকে সিসার উৎসগুলো থেকে দূরে সরাতে হবে। বিপজ্জনক কারখানায় শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। এ জন্য সরকার, সমাজকর্মী, পরিবার—সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ঘরের রঙের ক্ষেত্রে সিসাযুক্ত রঙের ব্যবহার কমাতে হবে, পানি ব্যবহারের আগে কমপক্ষে এক মিনিট আগে ট্যাপ চালু করে ব্যবহার করতে হবে। শিশুর হাত, খেলনা, বোতল বারবার পরিষ্কার করে ধুতে হবে, বাইরে থেকে এসে ব্যবহার করা কাপড় ছেড়ে গোসল করতে হবে। শিশুকে বাইরে নিয়ে গেলে মাস্ক পরাতে হবে। শিশুকে আয়রন, ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার দিতে হবে। এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
Comments
Post a Comment